আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস: মে দিবস

শ্রমের মর্যাদা ছড়িয়ে পরুক বিশ্বব্যাপী। “আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস” যা “মে দিবস” হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর পহেলা মে এ দিনটি পালিত হয় সারা বিশ্বব্যাপী। সারা বিশ্বের শ্রমিকেরা এই দিনটিকে বিভিন্নভাবে পালন করে থাকে। এই দিনটিতে শ্রমিকেরা রাজপথে শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে। বিশ্বের অনেক দেশে ১লা মে “Labour Day” হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও ভারতসহ প্রায় ৮০টি দেশে ১লা মে সরকারি ছুটি থাকে। কোন কোন দেশে এই দিবস টি বেসরকারিভাবে পালন হয়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের ইতিহাস
১৮৮৬ সালে “আমেরিকার” “শিকাগো” শহরে “হে মার্কেটের ম্যাসাকার” শহীদ শ্রমিকদের আত্মত্যাগ কে স্মরণ করে এই দিবসটি পালন করা হয়। সে সময়ে ১২-১৬ ঘন্টা ছিল শ্রম ঘন্টা কিন্তু সে তুলনায় পারিশ্রমিক ছিল অতি নগণ্য। এবং শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ ছিল খুবই অমানবিক এবং কষ্টদায়ক। এরই ধারাবাহিকতায় ১লা মে ১৮৮৬ সালে শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের নেমে পড়ে। আন্দোলনের মূল বিষয় ছিল শ্রমঘন্টা ৮ ঘণ্টা করতে হবে এবং কার্য পরিবেশ ভালো করতে হবে। এ বিষয়ে নিয়ে তারা “হে মার্কেটে” জমায়েত হয়েছিল। কিন্তু কারখানার মালিকেরা শ্রমিকদের এ দাবি মেনে নিলেন না। শ্রমিকদের ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের উপর গুলি বর্ষণ শুরু করে। ফলে সেখানে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ সদস্য নিহত হন। ৪ঠা মে ১৮৮৬ সালে হালকা বৃষ্টির মধ্যে “শিকাগো” শহরের “হে মার্কেট” নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্য নিয়ে জড়ো হন। এরপর ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ সাল থেকে সিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন “রেমন্ড নাভিনে”। এরপর ১৮৯১ সালে আন্তর্জাতিক দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়। তারপর ১৮৯৪ সালে মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনাটি ঘটে। পরে ১৯০৪ সালে “আমস্টারডাম” শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতান্ত্রিকদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে ৮ ঘন্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য এবং প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পহেলা মে মিছিল ও শোভা যাত্রার আয়োজন করতে সকল শ্রমজীবী, সংগঠন এবং চাকরিজীবী মানুষদের আহ্বান করা হয়। সেই সম্মেলনে শ্রমিকদের হতাহত হওয়ার ভয় না থাকায় সে বছর সকল শ্রমিক পহেলা মে বাধ্যতামূলকভাবে সকল কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ঠিক সেই দিনটিতে অনেক দেশের শ্রমিকেরা শুধু কাজ বন্ধ রাখা নয় বরং সেই দিনটিকে সরকারি ছুটির দাবী জানান।এবং বিভিন্ন দেশে সেই দাবি মেনে নিয়ে ১লা মে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। পূর্বতন সোভিয়েত রাষ্ট্র, চীন, কিউবা সহ বিশ্বের অনেক দেশেই মে দিবস একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ও ভারতে এই দিনটি যথাযথভাবে পালিত হয়ে আসছে। ১৯২৩ সালে ভারতে প্রথম মে দিবস পালিত হয়। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালন করেন না। আমেরিকা এবং কানাডাতে সেপ্টেম্বর মাসের “শ্রম দিবস” পালন হয়। কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং “শ্রমের নাইট” এই দিনটি পালনে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করে। “শিকাগো” শহরের “হে মার্কেটের” হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট “গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড” মনে করেছিলেন পহেলা মে তারিখে যে কোন আয়োজন করলে হানাহানি পর্যবসিত হতে পারে। এ কারণে ১৮৮৭ সালে তিনি নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশে “আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস” হিসেবে ১মে সরকারি ছুটি পালিত হয়। এবং বেশ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে এই দিবসটি পালন করা হয়।