ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ঘরোয়া উপায়: ঘরে বসেই স্বাস্থ্য সুরক্ষার কৌশল

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আসসালামুয়ালাইকুম। আশা করছি সকলে অনেক ভাল আছেন। বাংলাদেশের প্রতিদিন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অনেকেই ঔষধ এর পাশাপাশি প্রাকৃতিক নিয়মে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চান। আপনারা যারা প্রাকৃতিক নিয়মে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাদের জন্য আমাদের আজকের আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নেই কিছু সহজ কৌশল বা ঘরোয়া উপায় যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস কি?
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যেখানে শরীর যথেষ্ট পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না কিংবা তৈরিকৃত ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজে লাগে না। ফলে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশের প্রায় ৮ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
মূলত দুই ধরনের ডায়াবেটিস রয়েছে:
টাইপ-১ ডায়াবেটিস: শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হয় না।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস: শরীরে ইনসুলিন তৈরি হলেও যথেষ্ট পরিমাণ তৈরি হয় না, কিংবা তৈরি হওয়া ইনসুলিন শরীরের কাজে লাগে না।
ডায়াবেটিস কেন নিয়ন্ত্রণ জরুরী?
শরীরের জন্য ডায়াবেটিস অত্যন্ত বিপদজনক। নিচে ডায়াবেটিসের কিছু ঝুঁকি লিখা হলো। এসব সমস্যা থেকে সাবধান থাকার জন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা অনেক জরুরী।
১. হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে
২.দীর্ঘ সময় ধরে রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি থাকলে রক্তনালী, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩. কিডনি ফেইলিওরের প্রধান কারণ এই ডায়াবেটিস।
৪. ডায়াবেটিসের কারণে অনেকে চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৫. ডায়াবেটিসের কারণে রক্ত সঞ্চালন ও স্নায়ুর সমস্যার জন্য শরীরের ক্ষত সাড়তে অনেক বেশি সময় লাগে।
৬. ডায়াবেটিসের কারণে দুর্বল, ক্লান্তি এবং বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্য অভ্যাসের গুরুত্ব
ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের অন্যতম প্রধান উপায়। নিয়ম করে খাবার খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিচের খাবার গুলো খুবই ভালো:
১. শাকসবজি – করলা, পুঁইশাক, লাল শাক, পালং, ঢেঁড়স, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শসা, বেগুন ইত্যাদি।
২. ডাল জাতীয় খাবার – মসুর ডাল, মুগ ডাল, ছোলা, মটরশুটি (পরিমাণমতো)।
৩. হোল গ্রেইন / আঁশযুক্ত শস্য – লাল চাল, লাল আটা, ওটস, ডালিয়া।
৪. ফল (কম চিনি আছে এমন) – আপেল, পেয়ারা, জাম, পেয়ারা, কমলা, পেঁপে, স্ট্রবেরি ইত্যাদি (কলা, আঙুর, কাঁঠাল, লিচু বেশি না খাওয়া ভালো)।
৫. প্রোটিন – মাছ, মুরগি (চামড়া ছাড়া), ডিমের সাদা অংশ, দুধ (স্কিমড/কম ফ্যাট)।
৬. ভালো ফ্যাট – বাদাম (আমন্ড, আখরোট), তিল, সরিষার তেল/অলিভ অয়েল (সীমিত পরিমাণে)।
৭. পানি – পর্যাপ্ত পানি খাওয়া জরুরি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিচের খাবারগুলি এড়িয়ে চলা উচিত
নিচে উল্লেখিত খাবার গুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যা ডায়বেটিস রোগীদের এড়িয়ে চলা উচিত।
১. মিষ্টি, চিনি, মিষ্টি জাতীয় পানীয়।
২. সাদা চাল, সাদা আটা, পরোটা, ভাজা-পোড়া খাবার।
৩. ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত জুস, সফট ড্রিঙ্ক।
এক কথায়: কম চিনি + কম তেল + বেশি আঁশ + পর্যাপ্ত প্রোটিন।
ঘরোয়া উপায় যা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে
ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে এমন কিছু ঘরোয়া উপায় নিচে যুক্ত করা হলো। যা আপনারা সংগ্রহ করে নিজের ডাইবেটিস কমাতে চেষ্টা করতে পারেন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
√ মেথি বীজ: মেথি বীজ ভেজানো পানি ডায়াবেটিসের জন্য অনেক উপকার। এতে দ্রবণীয় আঁশ (soluble fiber) থাকে, যা খাবারের পর রক্তে শর্করার শোষণ কমায়। ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
√ করলা বা উচ্ছে: করলায় চারান্টিন (Charantin) নামে উপাদান আছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ইনসুলিনের মতো কাজ করে এমন কিছু যৌগ আছে করলায়। নিয়মিত করলার তরকারি বা রস সামান্য পরিমাণে খেলে রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
√ দারুচিনি: নিয়মিত দারুচিনি ভেজানো পানি খাওয়া ডায়াবেটিসের জন্য অনেক উপকারী একটি ঘরোয়া উপায়। দারুচিনি ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়, ফলে শরীর ইনসুলিনকে ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দারুচিনি নিয়মিত খেলে উপবাসকালীন (Fasting) রক্তে শর্করার মাত্রা কিছুটা কমে। খাবারে মসলা হিসেবে বা গরম পানিতে সামান্য দারুচিনি দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
মনে রাখতে হবে: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এগুলো খাওয়া ভালো কিন্তু ঔষধ এর বিকল্প নয়। অনেকের শরীরে এর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। সেজন্য নিয়মিত খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া অনেক জরুরী। কারণ প্রতিরোধক হিসেবে বেশি খাওয়ার কারণে শরীরের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জীবনযাত্রার পরিবর্তন
১. নিয়ম করে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা।
২. ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঘুম একটি মারাত্মক ব্যাপার। অন্তত ৬-৭ ঘন্টা ঘুম জরুরী।
৩. মানসিক চাপ কমে এমন কাজ করা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সতর্কতা
ঘরোয়া উপায়ে নিজেকে এবং নিজের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা ভালো তবে সেই সাথে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
উপসংহার: বর্তমানে বাংলাদেশের ডায়াবেটিসের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় হলো সঠিক নিয়মে চলাফেরা করা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস। তাই আসুন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সবাই সতর্ক থাকি। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের জন্য উপকারী হয়ে থাকে তাহলে আমাদের সাথেই থাকবেন এবং বন্ধুদের সুস্থ রাখতে তাদের সাথে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের টিপস গুলো শেয়ার করবেন।