বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে উক্তি, কবিতা ও গান

সময়ের প্রবাহে মানুষ যখন বার্ধক্যে পৌঁছায়, তখন তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভালোবাসা, যত্ন ও নিরাপত্তা। কিন্তু দুর্ভাগ্য বসত বর্তমান সমাজে অনেক প্রবীণ মানুষকেই ঠাই নিতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, সন্তান থাকার পরেও এক নিঃসঙ্গতা তাদের গ্রাস করছে। বৃদ্ধাশ্রম একদিকে যেমন নিরাপদ অন্যদিকে অনেকের জীবনের গভীর এক বেদনার নাম। কিছু মানুষ এখানে শান্তি খুঁজে পান তো কিছু মানুষ এখানে এসে হারিয়ে ফেলে জীবনের অর্থ। আপনারা যারা বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে উক্তি, কবিতা ও গান অনুসন্ধান করে চলেছেন আমাদের আজকের আর্টিকেলে তাদের স্বাগতম।

আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে অনেকে অনলাইনে অনুসন্ধান করেন বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে কিছু উক্তি, কবিতা ও গান। আপনারা যারা বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করার জন্য কবিতা অনুসন্ধান করে চলেছেন, তারা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি থেকে কিছু কবিতা সংগ্রহ করে আবৃত্তি করতে পারেন। অথবা যদি গান বা উক্তি অনুসন্ধান করে থাকেন, তবে দেরি না করে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি ফলো করুন।

বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে উক্তি

  • যুবকেরাই বৃদ্ধদের অবহেলা করে বেশি, শিশুরা তাদের অত্যাধিক পছন্দ করে।—কুপার”
  • বৃদ্ধরা জীবনকে যত বেশি ভালােবাসে যুবকরা ততখানি বাসে না।– ক্ৰডিক হাৰ্বাট”
  • একটি ভাল বার্ধক্যের রহস্য হলো নির্জনতার সাথে একটি সম্মানজনক চুক্তি।– গ্যাবরিয়াল গারসিয়া মারকিউজ
  • যৌবনের দুঃখ আর বার্ধক্যের দুঃখ এক নয়৷– হেনরি।
  • যদি আমি জানতাম যে আমি এতদিন বেঁচে থাকব, তাহলে আমি নিজের ভালো যত্ন নিতে পারতাম।– মাইকি ম্যান্ট্যল
  • বৃদ্ধ লােকদের জীবনের উপর মমতা বেশি।– সফোক্লেস”
  • বৃদ্ধ বয়স যদিও ঐশ্বর্যমণ্ডিত তবুও দুঃখ বয়ে আনে।– জন ক্লার্ক”
  • যখন আপনি চল্লিশ, আপনার অর্ধেক অতীতের অন্তর্গত এবং যখন আপনি সত্তর, আপনার প্রায় সবই অতীত৷– জিন আনউইল
  • জীবনকে সবার থেকে বেশি করে চায় বয়স্করা।– সফোক্লেস
  • যুবককালে উপভোগ করো আর বার্ধক্যে সেই দিনগুলো স্মরণ করো।– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • বয়স্করা যুদ্ধের আহ্বান করে। কিন্তু তারুণদেরকে সেই যুদ্ধ করতে হয় এবং মরতে হয়– হারবার্ট হুভার
  • বাড়ি যদি মন্দির হয় তবে মা-বাবা ভগবান।—পিলু
  • আপনার যা করার তা বৃদ্ধ হওয়ার আগেই করতে হবে।– মারগারেট ডেল্যান্ড
  • বৃদ্ধলােকের মতাে কেউ জীবনকে ভালােবাসে না।– সফোক্লেস”
  • তারুণ্যে যে সৎ এবং কর্মময় হয়, বার্ধক্যে তখন স্বর্ণুযুগ বলা যায়।– জর্জ গ্রসভিল 

বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে কবিতা

“বৃদ্ধাশ্রম”

আল সারজিল সিয়াম

কেমন করে পারো তোমরা
কেমন করে পারো,
এমন প্রিয় বাবা মাকে
বৃদ্ধাশ্রমে ছাড়ো।

তিল তিল করে যারা
তোমায় করল বড়,,
কেমন করে তাদের ছেড়ে
বউয়ের হাতটি ধরো।

মায়া মমতা স্নেহ দিয়ে
আগলে রাখেন যারা,
তোমাদের পেয়ে ভালোবেসে
দিশেহারা তারা।

হাজার ত্যাগের বিনিময়ে
আজকের এই তুমি,
তুমি বিহনে বৃদ্ধাশ্রম
যেন মরুভূমি।

বটবৃক্ষের ছায়া বাবা
শান্তি মায়ের মুখ,,
মা -বাবা ছাড়া জগতে
হয়না কোন সুখ।

ঘাম ঝরানো টাকায় বাবার
করেছো লেখাপড়া,,
তিলেতিলে মায়ের হাতে
আজকে তুমি গড়া।

জান্নাত কে অবহেলা
করো না যেন কেউ,,
মনের মাঝে অশান্তির
ঝড় তুলবে ঢেউ।।

সময় থাকতে সাধন করো
বাবা-মায়ের সেবা করো,
চাইলে পরিত্রাণ,
মন থেকে মুছে ফেলো
বৃদ্ধাশ্রম এর ঘ্রাণ।

বৃদ্ধাশ্রম

আফতাব মল্লিক

বাবু,
তুই নাকি আর নিতে আসবি না আমাকে ?
এরা সবাই বলছে ।
আমি কিন্তু বিশ্বাস করিনি।
তাই কখনো হয়, বল ?
ছেলে কোনোদিন মাকে ছেড়ে থাকতে পারে ?
তুই আবার সেই ছোটবেলা থেকেই খুব ভীতু ।
একটু জোরে ঝড় হলে বা রাতে বেড়াল ডাকলে তুই​ কেমন জাপটে ধরতিস আমাকে ।
আর কেমন গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকতিস আমার কোলে ।
তখন আমি তোকে বলতাম ভয় কি বাবা ,এই তো আমি ।
একটু বড়ো হয়ে যখন তুই স্কুলে যেতে শিখলি !
তোর জন্য সারাদিন আমি স্কুলের পাশে মাঠে বসে থাকতাম ।
এসব কথা ভাবলে এখন আমার খুব হাসি পায় ।
সেই তুই কত্তো বড়ো হয়ে গেছিস !
তোর মনে আছে ? যেদিন তুই চাকরি পাওয়ার খবরটা আমাকে দিয়েছিলি ।
আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল!
তাই দেখে তুই কেমন পাগলের মতো আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলি।
আমি বললাম, পাগল ছেলে আমার ।
মায়ের চোখের জল সবসময় দুঃখের হয় না রে ।
এতো আমার সারাজীবনের কষ্টগুলো আজ খুশিতে আশীর্বাদ হয়ে ঝরে পড়ছে ।
আর যেদিন তোর বিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলাম ?
তুই কেমন লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলি ?
আর বলেছিলি ,
না মা, আমি আমার এই ভালোবাসা তোমাকে ছাড়া কাউকে দিতে পারবো না ।
আমার পৃথিবীতে তুমি ছাড়া আর কেউ থাকবে না।
আমি বলেছিলাম, ভালোবাসা বিলিয়ে দিলে কমে না রে ।
আর তারপর তোর বিয়ে হলো।
প্রান ভরে তোদেরকে আশীর্বাদ করলাম ।
এতো বড়ো বাড়িতে আমিও একা থাকার একঘেয়েমি থেকে হাঁফ ছেড়ে বাচলাম, বৌমা কে পেয়ে ।
তারপর দাদুভাই এলো আমার বন্ধু হয়ে ।
পুরো তোর মতো, ঠিক ছোটবেলায় তুই যেমন ছিলি ।
ওপরওয়ালা যেনো সব খুশি গুলো আমাকে একসঙ্গে দিয়ে দিলেন !
আজ দশদিন তোদেরকে দেখিনি বাবা ।
হ্যাঁ রে, দাদুভাই কে সন্ধ্যা বেলায় কে কোলে নেয় ?
ভাইকে সব সময় গরম জামাকাপড় পরিয়ে রাখিস তো?
আর তুই খাওয়ার পরে মৌরি, জোয়ানের গুঁড়ো খাস তো ?
বৌমার কোমরের ব্যথাটা কমেছে একটু ?
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা এখানে, তোদের কথা ভেবে ।
কি করবো বল !
সারাজীবন তোকে আগলে রাখার অভ্যেস যে বাবা।
কবে আসবি বল না আমাকে নিতে ?
আমার মন টিকছে না এখানে ।
এখানে অনেক লোক আছে কিন্তু আমার চোখ তো তোর পথ চেয়ে বাবা?
সারাজীবন তোকে বুকে আগলে রেখেছি বাবা।
এখন আমাকে বুকে না পারিস অন্তত বাড়িতে একটু জায়গা দে না বাবা ?
তোর অতো বড়ো বাড়িতে কতো জিনিস !
সেখানে এই বুড়িটার একটু ঠাঁই হবে না বাবা?
আর যদি নাই পারিস !
তাহলে এখান থেকে নিয়ে আমাকে সেই জায়গায় রেখে আয় বাবা, যেখান থেকে কেউ কোনদিন ফিরে আসে না !
কেউ কোনদিন ফিরে আসে না ,,,,,,,

বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে গান

“ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার
মস্ত flat-এ যায়না দেখা এপার-ওপারছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসারমস্ত flat-এ যায়না দেখা এপার-ওপার
নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামী দামীসবচে’ কমদামী ছিলাম একমাত্র আমিছেলের আমার আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রমআমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম
আমার ব্যবহারের সেই আলমারি আর আয়নাওসব নাকি বেশ পুরনো flat-এ রাখা যায় নাআমার ব্যবহারের সেই আলমারি আর আয়নাওসব নাকি বেশ পুরনো flat-এ রাখা যায় না
ওর বাবার ছবি, ঘড়ি, ছড়ি বিদেয় হল তাড়াতাড়িছেড়ে দিলো, কাকে খেলো পোষা বুড়ো ময়নাস্বামী স্ত্রী আর Alsatian জায়গা বড়ই কমআমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম
নিজহাতে ভাত খেতে পারতো না কো খোকাবলতাম, “আমি না থাকলে রে কি করবি বোকা?”ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতো খোকা আমার কথা শুনেখোকা বোধহয় আর কাঁদেনা, নেই বুঝি আর মনে
ছোট্টবেলায় স্বপ্ন দেখে উঠতো খোকা কেঁদেদু’হাত দিয়ে বুকের কাছে রেখে দিতাম বেঁধেদু’হাত আজো খোঁজে, ভুলে যায় যে একদমআমার ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম
খোকারও হয়েছে ছেলে দু’বছর হলোআর তো মাত্র বছর পঁচিশ, ঠাকুর মুখ তোলোএকশ’ বছর বাঁচতে চাই, এখন আমার সাধপচিশ বছর পরে খোকার হবে ঊনষাট
আশ্রমের এই ঘরটা ছোট, জায়গা অনেক বেশিখোকা আমি দু’জনেতে থাকবো পাশাপাশিসেই দিনটার স্বপ্ন দেখি ভীষণ রকমমুখোমুখি আমি খোকার বৃদ্ধাশ্রমমুখোমুখি আমি খোকার বৃদ্ধাশ্রমমুখোমুখি আমি খোকার বৃদ্ধাশ্রম”

 

শেষ কথা: আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার জন্য উপকারী হয়ে থাকে, তবে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *