মা-কে নিয়ে উক্তি ও কবিতা

মা–ছোট্ট একটা শব্দ কিন্তু এর এক আকাশ সমান অর্থ রয়েছে। মা মানে স্নেহ, মা মানে ত্যাগ। ”মা” এই ছোট্ট শব্দটি দ্বারা হাজার কোটি মানে বোঝায়। এই মা নামক মানুষ টি আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রিয় মানুষ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং প্রতিটি মুহূর্তে মায়ের অবদান অবিস্মরণীয়। আমাদের মুখের প্রথম বুলি মা। হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার সময়-ও মা ডাক দিতে আমরা ভুলি না। বাড়িতে ফিরে প্রথমে আমরা যে ডাকটি দেই তা হলো ”মা”। মায়ের তুলনা একমাত্র মা-ই হয়, এর সাথে অন্য কোন কিছুর তুলনা হয় না। আমাদের প্রথম ভালোবাসা আমাদের মা, কিন্তু আমরা কখনও মায়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি না কিংবা চাইনা। আমাদের আজকের আর্টিকেলটিতে মাকে নিয়ে কিছু উক্তি ও কবিতা শেয়ার করা হয়েছে।
আমাদের চোখে দেখা সবচেয়ে সুন্দর নারী বা মহিলা যাই বলে না কেন তিনি হলেন আমাদের মা। পৃথিবীর কোন সৌন্দর্য মায়ের এই সৌন্দর্যকে হার মানাতে পারে না। চাঁদের সৌন্দর্য-ও হার মানে আমাদের মায়ের সৌন্দর্যের কাছে। যে ব্যক্তির কাছে আমরা সবচেয়ে বেশি ঋণী বা বলা যায় চিরঋণী, সেই ব্যক্তিটি আমাদের মা। আমাদের যত সফলতা বা অর্জন সবকিছুর মূলে রয়েছে মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম, নৈতিকতা ও শিক্ষা। একটি শিশুর প্রথম স্কুল তার পরিবার কিন্তু সে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মা। আমাদের এই আর্টিকেলটিতে আপনারা একসাথে পেয়ে যাচ্ছেন মাকে নিয়ে কিছু সুন্দর সুন্দর উক্তি এবং খুব সুন্দর সুন্দর কিছু কবিতা।
মা-কে নিয়ে কিছু বিখ্যাত উক্তি
মাকে নিয়ে আমরা উক্তি অনুসন্ধান করে থাকি যাতে করে মাকে নিয়ে খুব সুন্দর সুন্দর স্ট্যাটাস শেয়ার করতে পারি আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিশেষ করে মা দিবস কে কেন্দ্র করে আমাদের এই অনুসন্ধান বেড়ে যায় বহুগুণ। মাকে নিয়ে উক্তি সার্চ করার সাথে সাথে অনলাইন প্লাটফর্মে হাজারো উক্তি ছড়াছড়ি শুরু হয়। সেগুলোর মধ্যে থেকে বাছাই করা খুব সুন্দর কিছু উক্তি আমাদের এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে শেয়ার করা হলো। আপনারা যারা মাকে নিয়ে সুন্দর সুন্দর উক্তি অনুসন্ধান করছেন এই আর্টিকললটি তাদের জন্য।
০১। যে গর্ভ তোমাকে ধারন করেছে সে গর্ভধারিণী মায়ের প্রতি কর্তব্য কর ও শ্রদ্ধা নিবেদন কর।
-আল কুরআন।
০২। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।
-মহানবী হজরত মুহম্মদ (স.)।
০৩। মা হচ্ছে এমন এক টনিক যার স্পর্শে সন্তানেরা এমনিতেই অর্ধেক সুস্থ হয়ে যায়।
-রেদোয়ান মাসুদ
০৪। মায়ের হৃদয় হল একটি গভীর অতল যার নীচে আপনি সর্বদা ক্ষমা পাবেন।
– অনার ডি বালজাক
০৫। যার মা আছে সে কখনই গরীব নয়।
-আব্রাহাম লিংকন।
০৬। মা হচ্ছে সন্তানের আদর্শ বিদ্যা নিকেতন। মায়ের আদর অতুলনীয়। মা হতে গিয়ে যে মারা যায় ইসলামে তাকে শহীদের মর্যাদা দিয়েছে।
-বুখারি শরিফ।
০৭। একজন মায়ের বাহু কোমলতা দিয়ে তৈরি, এবং শিশুরা তাদের মধ্যে সুন্দরভাবে ঘুমায়।
-ভিক্টর হুগো
০৮। পৃথিবীতে তোমার হাজার হাজার বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী থাকবে, কিন্তু সবশেষে তুমি একজন মানুষকেই খুজে পাবে, যাকে তুমি শত আঘাত দেওয়ার পরেও সে শুধু তোমার ভবিষ্যত নিয়েই ভাবে, আর তিনি হলেন মা।
-রেদোয়ান মাসুদ।
০৯। সম্ভবত আমার দেখা সবচেয়ে আবেদনময়ী আমার মা।
-শিয়া লাবেউফ।
১০। কোন একটা বিষয় মায়েদেরকে দুইবার ভাবতে হয়–একবার তার সন্তানের জন্য আরেকবার নিজের জন্য।
-সোফিয়া লরেন।
১১। পৃথিবীর সেরা ওষুধ হল মায়ের চুম্বন।
– বেনামী
১২। মা হলো স্নেহের ভান্ডার, যা কখনও নিঃশেষ হয় না।
-রেদোয়ান মাসুদ
১৩। তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো।
-নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।
১৪. আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা হলেন আমার মা। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সমস্ত অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শারীরিক শিক্ষার ফল।
-জর্জ ওয়াশিংটন।
১৫। আমি আমার মায়ের প্রার্থনা মনে করি এবং তারা সবসময় আমাকে অনুসরণ করে। ওরা সারাজীবন আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
-আব্রাহাম লিঙ্কন
১৬। আমার মা মনে করেন আমিই সেরা আর মা মনে করেন বলেই আমি সেরা হয়ে গড়ে উঠেছি।
-দিয়াগো ম্যারাডোনা।
১৭। একজন মা হলেন তিনি যিনি অন্য সকলের স্থান নিতে পারেন কিন্তু যার স্থান অন্য কেউ নিতে পারে না।” – কার্ডিনাল মেইমিলড
১৮। মা আমাদের সবসময় এটা বুঝাতে চাইতেন যে জীবনের চরম কষ্টের মূহুর্তগুলো তোমাদের হাসির কোন গল্পের অংশ হয়ে যাবে এক সময়।
– নোরা এফ্রন।
১৯। শুধুমাত্র মায়েরাই ভবিষ্যতের কথা ভাবতে পারে কারণ তারা তাদের সন্তানদের মধ্যে এটি জন্ম দেয়। -ম্যাক্সিম গোর্কি
২০। মা যেমন তাঁর নিজ পুত্রকে নিজের জীবন দিয়ে রক্ষা করে তেমনি সকল প্রাণীর প্রতি অপরিমেয় মৈত্রীভাব পোষণ করবে।
– গৌতম বুদ্ধ।
২১। তিন রকম দোয়া নি:সন্দেহে কবুল হয়। মজলুমের দোয়া,মুসাফিরের দোয়া আর সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া।
-মহানবী হজরত মুহম্মদ (স.)।
২২। আমার মা বিস্ময়কর আর আমার কাছে উৎকর্ষতার আরেক নাম।
-মাইকেল জ্যাকসন।
মা-কে নিয়ে কবিতা
আপনি যখন আমার এই আর্টিকেলটি পড়ছেন, ঠিক সে সময় আপনি নিশ্চয়ই আপনার মায়ের শূন্যতা গভীরভাবে অনুভব করছেন। যার কারণেই মাকে নিয়ে কিছু মিষ্টি মিষ্টি ব্যাপার অনুসন্ধান করে চলেছেন। আপনাদের এদিকটি বিবেচনা করে আমাদের এই আর্টিকেলে মাকে নিয়ে কিছু সুন্দর সুন্দর কবিতা শেয়ার করা হলো। এই ব্যস্ততম জীবনে মাকে নিয়ে কোন কিছু অনুসন্ধান করার সময় সচরাচর কারও হয়না। তবে আমাদের উচিৎ শত ব্যস্ততার মধ্যেও মমতাময়ী মায়ের জন্য কিছু সময় বের করা। আমাদের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা মাকে নিয়ে লিখা কবিতা নিয়ে শেয়ার করতে পারেন আপনাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়। অথবা আবৃত্তি করে শোনাতে পারেন মাকে,,,,,,,,,,,!!!!!!!!
০১
“মিথ্যাবাদী মা”
“এতোটা দিন পেরিয়ে আজো মায়ের জন্য কাঁদি
কারণ আমার মা যে ছিলো ভীষণ মিথ্যাবাদী
বাবা যেদিন মারা গেলেন আমরা হলাম একা
সেদিন থেকেই বাঁক নিয়েছে মায়ের কপাল রেখা।
মা বলতো বাবা নাকি তারার ভিড়ে আছে
লেখাপড়া করি যদি নেমে আসবে কাছে।
তারায় তারায় বাবা খুঁজি – তারার ছড়াছড়ি
আমার মায়ের মিথ্যা বলার প্রথম হাতেখড়ি।
পাড়া পড়শী বলল এসে এই বয়সেই রাঢ়ি
একা একা এতোটা পথ কেমনে দিবে পাড়ি।
ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে করো আবার
মা বললো ওসব শুনলে ঘেন্না লাগে আমার।
একা কেনো? খোকন আছে, বিয়ের কি দরকার
ওটা ছিলো আমার মায়ের চরম মিথ্যাচার।
০২
কত ভালবাসি
– কামিনী রায়
জড়ায়ে মায়ের গলা শিশু কহে আসি,-
“মা, তোমারে কত ভালোবাসি!”
“কত ভালবাস ধন?” জননী শুধায়।
“এ-ত।” বলি দুই হাত প্রসারি’ দেখায়।
“তুমি মা আমারে ভালবাস কতখানি?”
মা বলেন “মাপ তার আমি নাহি জানি।”
“তবু কতখানি, বল।”
“যতখানি ধরে
তোমার মায়ের বুকে।”
“নহে তার পরে?”
“তার বাড়া ভালবাসা পারি না বাসিতে।”
“আমি পারি।” বলে শিশু হাসিতে হাসিতে!
০৩
পল্লী জননী
– জসীম উদ্দীন
রাত থম থম স্তব্ধ, ঘোর-ঘোর-আন্ধার,
নিশ্বাস ফেলি, তাও শোনা যায়, নাই কোথা সাড়া কার।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বিসয়া একেলা জাগিছে মাতা,
করুণ চাহনি ঘুম ঘুম যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।
শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্বলে,
তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে।
ভন্ ভন্ ভন্ জমাট বেঁধেছে বুনো মশকের গান,
এঁদো ডোবা হতে বহিছে কঠোর পচান পাতার ঘ্রাণ?
ছোট কুঁড়ে ঘর, বেড়ার ফাঁকেতে আসিছে শীতের বায়ু,
শিয়রে বসিয়া মনে মনে মাতা গণিছে ছেলের আয়ু।
০৪
নোলক
– আল মাহমুদ
আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।
নদীর কাছে গিয়েছিলাম, আছে তুমার কাছে?
-হাত দিও না আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে।
বললো কেঁদে তিতাস নদী হরিণবেড়ের বাঁকে
শাদা পালক বকরা যেথায় পাখ ছাড়িয়ে থাকে।
জল ছাড়িয়ে দল হারিয়ে গেলাম বনের দিক
সবুজ বনের হরিৎ টিয়ে করে রে ঝিকমিক
বনের কাছে এই মিনতি, ফিরিয়ে দেবে ভাই,
আমার মায়ের গয়না নিয়ে ঘরেক যেতে চাই।
কোথায় পাবো তোমার মায়ের হারিয়ে যাওয়া ধন
আমরা তো সব পাখপাখালি বনের সাধারণ।
সবুজ চুলে ফুল পিন্দেছি নোলক পরি না তো।
ফুলের গন্ধ চাও যদি নাও, হাত পাতো হাত পাতো-
বলে পাহাড় দেখায় তাহার আহার ভরা বুক।
হাজার হরিণ পাতার ফাঁকে বাঁকিয়ে রাখে মুখ।
এলিয়ে খোঁপা রাত্রি এলেন, ফের বাড়ালাম পা
আমার মায়ের গয়না ছাড়া ঘরকে যাবো না।
০৫
কোথায় ছিলাম আমি
-কাজী নজরুল ইসলাম
মা গো! আমায় বলতে পারিস কোথায়
ছিলাম আমি-
কোন্ না-জানা দেশ থেকে তোর
কোলে এলাম নামি?
আমি যখন আসিনি, মা তুই কি আঁখি মেলে
চাঁদকে বুঝি বলতিস্-ঐ ঘর-ছাড়া মোর
ছেলে?
শুকতারাকে বলতিস্ কি, আয় রে নেমে আয়-
তোর রূপ যে মায়ের
কোলে বেশি শোভা পায়।
কাজলা দিঘির নাইতে গিয়ে পদ্মফুলের
মুখে
দেখ্তিস কি আমার ছায়া, উঠ্ত কাঁদন
বুকে?
গাঙে যখন বান আসত, জানত না মা কেউ-
তোর বুকে কি আসতাম আমি হয়ে স্নেহের
ঢেউ?
০৬
আঁকতে আঁকতে
-ফারুক নওয়াজ
আঁকাই আমার শখ;
আঁকতে বসে আঁকি যদি
একটি পাহাড়, একটি নদী
শাদা ডানায় উড়ে যাওয়া
ধবধবে এক বক-
শেষ হয়ে যায় আঁকা যখন
অবাক লাগে ভারী-
তাকিয়ে দেখি আমার মায়ের
সবুজ রঙের শাড়ি।