মা দিবস নিয়ে কিছু কথা, উক্তি ও কবিতা

সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা সবাইকে মা দিবসের শুভেচ্ছা। পৃথিবীর সব মা জননীরা সন্তানের ভালোবাসায় সিক্ত থাকুক। “মা” এই ছোট্ট শব্দটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে আবেগঘন অনুভূতির নাম। জন্মের পর প্রথম মায়ের স্পর্শ পেয়ে দেহ-মনের শিহরণ জাগে মানব দেহের। একটি সন্তানকে যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শব্দ কোনটি,,? একটি-ই উত্তর পাওয়া যাবে তা হলো “মা”। সামনে আসছে মা দিবস। মা দিবসে মা-এর প্রতি অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য যারা অনলাইনে অনুসন্ধান করে চলেছেন মা দিবস নিয়ে উক্তি ও কবিতা। তারা আমাদের এই ওয়েবসাইটিতে চলে আসুন। মা দিবসকে সামনে রেখে আমাদের আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা নিয়ে এসেছি মা দিবস নিয়ে কিছু কথা, উক্তি ও কবিতা।আমাদের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা মা দিবস নিয়ে উক্তি শেয়ার করতে পারেন এবং কবিতা গুলো সংগ্রহ করে আবৃত্তি করে মায়ের প্রতি ভালবাসা তুলে ধরতে পারেন। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস পালন করা হয়।
শুধু মা দিবসে নয় প্রতিটি সন্তানের উচিত প্রতিদিন ভালোবাসা শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় মায়েদের জীবন ভরিয়ে তোলা। মাকে ভালোবাসার জন্য কি নির্দিষ্ট কোন দিনক্ষণের প্রয়োজন হয়,,,???? মা যেমন শুধু মা দিবসে আমাদের ভালবাসে না বরং তার ভালোবাসা প্রতিদিনই একই রকম থাকে।ঠিক তেমনি আমাদেরও উচিত বছরের প্রতিটি দিনই মা দিবসে পরিণত করা। কারণ মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য আলাদা কোন দিনের অপেক্ষা করতে হয় না। ছোট ছোট ব্যাপারগুলোর মধ্য দিয়েই মাকে খুশি করা যায়, ছোট ছোট আনন্দ দিয়েই মায়ের মন ভালো করে মায়ের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব।
মা দিবস নিয়ে উক্তি
বিভিন্ন সময় মাকে নিয়ে বা মাকে কেন্দ্র করে অনেকে অনেক উক্তি ব্যক্ত করেছেন। যার মধ্যে কিছু উক্তি বাছাই করে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলে তুলে ধরেছি। আপনারা যারা মা দিবসে শেয়ার করার জন্য মা দিবস নিয়ে উক্তি অনুসন্ধান করে চলেছেন অনলাইনের বিভিন্ন প্লাটফর্মে। তারা আমাদের এই ওয়েবসাইটটিকে ফলো করুন। আমাদের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা আপনাদের কাঙ্ক্ষিত মা দিবস নিয়ে উক্তি সংগ্রহ করে শেয়ার করুন নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ায়।
- যে গর্ভে তোমাকে ধারন করেছে সে গর্ভধারিণী মায়ের প্রতি কর্তব্য কর ও শ্রদ্ধা নিবেদন কর – আল কুরআন
- যার মা আছে সে কখনই গরীব নয়। – আব্রাহাম লিংকন
- বাবা এর অঙ্কিত করা ছাগলছানা এর জীবনধারা সব সময় জন্য থাকে
- মা হল পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনাসূদে অকৃত্রিম ভালোবাসা
- মায়ের অভিশাপ কখনো সন্তানের গায়ে লাগেনা। দোয়া গায়ে লাগে, অভিশাপ গায়ে লাগেনা। হাঁসের গায়ের পানির মত অভিশাপ ঝরে পড়ে যায়। – হুমায়ূন আহমেদ
- মায়ের শিক্ষাই শিশুর ভবিষ্যতের বুনিয়াদ, মা-ই হচ্ছেন শিশুর সর্বোৎকৃষ্ট বিদ্যাপীঠ – সংগৃহীত
- আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা হলেন আমার মা। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সমস্ত অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শারিরীক শিক্ষার ফল। – জর্জ ওয়াশিংটন
- আমার মা মনে করেন আমিই সেরা আর মা মনে করেন বলেই আমি সেরা হয়ে গড়ে উঠেছি। দিয়াগো ম্যারাডোনা
- সন্তানেরা ধারালো চাকুর মত। তারা না চাইলেও মায়েদের কষ্ট দেয়। আর,মায়েরা তাদের শেষ র*ক্তবিন্দু পর্যন্ত সন্তানদের সাথে লেগে থাকে।
- মায়েরা অল্প সময়ের জন্যই সন্তানদের হাত ধরে থাকেন, তবে সারা জীবনের জন্য ধরে রাখেন তদের হৃদয়। কিন্তু তোমার সকল গল্পের পিছনে রয়েছে তোমার মায়ের গল্প কারণ সেখান থেকেই তুমি শুরু করেছো। – মিচ অ্যালবোম
- মায়ের আদরে যে আরাম, ভরসা আছে, তা আর পৃথিবীর কারও আদরে নেই – প্রিন্সেস ডায়না।
- তোমাকে অনেক জ্বালিয়েছি মা, অনেক সময় না বুঝে না জেনে তোমায় কষ্ট দিয়েছি। আই অ্যাম সরি। লাভ ইউ মা। হ্যাপি মাদার্স ডে।
- মাতৃত্ব, ভালবাসার শুরু আর শেষ এখানেই – রবার্ট ব্রাউনিং।
- মা, যে আমার সমস্ত না বলা কথা চট করে বুঝে যায়! হ্যাপি মাদার্স ডে
- মায়ের কথা পড়লে মনে আকুল হয়ে কাঁদি, মা যে আমার আশীর্বাদের দিব্য প্রদীপ ভাতী। মা দিবসের শুভেচ্ছা।
মা দিবস নিয়ে কবিতা
সম্ভবতই আমরা মাকে সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসি।কিন্তু মায়ের প্রতি ভালবাসাটা আমরা বিভিন্ন কারণে প্রকাশ করতে চাই না বা পারি না। অনেকে আমরা কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে মায়ের প্রতি নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করে থাকি। মাকে সুন্দর সুন্দর কবিতা শুনিয়ে তার ভালোবাসা তার কাছে প্রকাশ করে থাকি। আপনারা যারা অনুসন্ধান করে চলেছেন মা দিবসের কবিতা। তাদের জন্য আমাদের এই আর্টিকেলে মা দিবসের কিছু কবিতা তুলে ধরা হলো। আপনারা এই কবিতাগুলো সংগ্রহ করুন, আবৃত্তি করুন এবং মায়ের প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করুন।
মা
_ কাজী নজরুল ইসলাম
যেখানেতে দেখি যাহা
মায়ের মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের যতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে না ভাই।
হেরিলে মায়ের মুখ
দূরে যায় সব দুখ,
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শীতল কোলে
সকল যাতনা ভোলে
কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।
কত করি উৎপাত
আব্দার দিন রাত,
সব স’ন হাসি মুখে, ওরে সে যে মা!
আমাদের মুখ চেয়ে
নিজে র’ন নাহি খেয়ে,
শত দোষে দোষী তবু মা তো ত্যাজে না।
পল্লী জননী
_জসীম উদ্দীন
রাত থম থম স্তব্ধ নিঝুম, ঘোর- ঘোর-আন্ধার,
নিশ্বাস ফেলি, তাও শোনা যায়, নাই কোথা সাড়া কার।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা,
করুণ চাহনি ঘুম্ ঘুম্ যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।
শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্বলে,
তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে।
ভন্ ভন্ ভন্ জমাট বেঁধেছে বুনো মশকের গান,
এঁদো ডোবা হতে বহিছে কঠোর পচান পাতার ঘ্রাণ?
ছোট কুঁড়ে ঘর, বেড়ার ফাঁকেতে আসিছে শীতের বায়ু,
শিয়রে বসিয়া মনে মনে মাতা গণিছে ছেলের আয়ু।
জননী জন্মভূমি
_সুভাষ মখোপাধ্যায়
আমি ভীষণ ভালবাসতাম আমার মা-কে
-কখনও মুখ ফুটে বলি নি।
টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে
কখনও কখনও কিনে আনতাম কমলালেবু
-শুয়ে শুয়ে মা-র চোখ জলে ভ’রে উঠত
আমার ভালাবাসার কথা
মা-কে কখনও আমি মুখ ফুটে বলতে পারি নি।
হে দেশ, হে আমার জননী-
কেমন ক’রে তোমাকে আমি বলি!
বীরপুরুষ
_রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে
মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।
তুমি যাচ্ছ পালকিতে, মা, চ’ড়ে
দরজা দুটো একটুকু ফাঁক ক’রে,
আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ‘পরে
টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে।
রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে
রাঙা ধূলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে।
সন্ধ্যে হল, সূর্য নামে পাটে,
এলেম যেন জোড়াদিঘির মাঠে।
ধূ ধূ করে যে দিক-পানে চাই,
কোনোখানে জনমানব নাই,
তুমি যেন আপন-মনে তাই
ভয় পেয়েছ-ভাবছ, ‘এলেম কোথা।’
আমি বলছি, ‘ভয় কোরো না মা গো,
ওই দেখা যায় মরা নদীর সোঁতা।’
আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে-
অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো।
তুমি যেন বললে আমায় ডেকে,
‘দিঘির ধারে ওই-যে কিসের আলো!’
এমন সময় ‘হাঁরে রে রে রে রে’
ওই – যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে!
তুমি ভয়ে পালকিতে এক কোণে
ঠাকুর-দেবতা স্মরণ করছ মনে,
বেয়ারাগুলো পাশের কাঁটাবনে
আমি যেন তোমায় বলছি ডেকে,
‘আমি আছি, ভয় কেন, মা, করো!’
তুমি বললে, ‘যাস নে খোকা ওরে,’
আমি বলি, ‘দেখো-নাচুপ করে।’
ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে,
কী ভয়ানক লড়াই হল মা যে
শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা।
কত লোক যে পালিয়ে গেল ভয়ে,
কত লোকের মাথা পড়ল কাটা।।
এত লোকের সঙ্গে লড়াই ক’রে,
ভাবছ খোকা গেলই বুঝি মরে।
আমি তখন রক্ত মেখে ঘেমে
বলছি এসে, ‘লড়াই গেছে থেমে,’
তুমি শুনে পালকি থেকে নেমে
চুমো খেয়ে নিচ্ছ আমায় কোলে
বলছ, ‘ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল’
কী দুর্দশাই হত তা না হলে!’
কোথায় ছিলাম আমি
_কাজী নজরুল ইসলাম
মা গো! আমায় বল্তে পারিস কোথায় ছিলাম আমি-
কোন্ না-জানা দেশ থেকে তোর কোলে এলাম নামি?
আমি যখন আসিনি, মা তুই কি আঁখি মেলে
চাঁদকে বুঝি বল্তিস-ঐ ঘর-ছাড়া মোর ছেলে?
শুকতারাকে বল্তিস কি, আয় রে নেমে আয়-
তোর রূপ যে মায়ের কোলে বেশি শোভা পায়।
কাজলা দিঘির নাইতে গিয়ে পদ্মফুলের মুখে
দেখ্তিস কি আমার ছায়া, উঠ্ত কাঁদন বুকে?
গাঙে যখন বান আস্ত, জান্ত না মা কেউ-
তোর বুকে কি আসতাম আমি হয়ে স্নেহের ঢেউ?
কখনো আমার মাকে
_শামসুর রাহমান
কখনো আমার মাকে কোনো গান গাইতে শুনিনি।
সেই কবে শিশু রাতে ঘুম পাড়ানিয়া গান গেয়ে
আমাকে কখনো ঘুম পাড়াতেন কি না আজ মনেই পড়ে না।
যখন শরীরে তার বসন্তের সম্ভার আসেনি,
যখন ছিলেন তিনি ঝড়ে আম-কুড়িয়ে বেড়ানো
বয়সের কাছাকাছি হয়তো তখনো কোনো গান
লতিয়ে ওঠেনি মীড়ে মীড়ে দুপুরে সন্ধ্যায়,
পাছে গুরুজনদের কানে যায়। এবং স্বামীর
সংসারে এসেও মা আমার সারাক্ষণ
ছিলেন নিশ্চুপ বড়ো, বড়ো বেশি নেপথ্যচারিণী। যতদূর
জানা আছে, টপ্পা কি খেয়াল তাঁকে করেনি দখল
কোনোদিন। মাছ কোটা কিংবা হলুদ বাটার ফাঁকে
অথবা বিকেলবেলা নিকিয়ে উঠোন
ধুয়ে মুছে বাসন-কোসন
সেলাইয়ের কলে ঝুঁকে, আলনায় ঝুলিয়ে কাপড়,
ছেঁড়া শার্টে রিফু কর্মে মেতে
আমাকে খেলার মাঠে পাঠিয়ে আদরে
অবসরে চুল বাঁধবার ছলে কোনো গান গেয়েছেন কি না
এতকাল কাছাকাছি আছি তবু জানতে পারিনি।
যেন তিনি সব গান দুঃখ-জাগানিয়া কোনো কাঠের সিন্দুকে
রেখেছেন বন্ধ ক’রে আজীবন, এখন তাদের
গ্রন্থিল শরীর থেকে কালেভদ্রে সুর নয়, শুধু
ন্যাপথলিনের তীব্র ঘ্রাণ ভেসে আসে !
আমাদের মা
_ হুমায়ুন আজাদ
আমাদের মাকে আমরা বলতাম তুমি বাবাকে আপনি।
আমাদের মা গরিব প্রজার মতো দাঁড়াতো বাবার সামনে
কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ ক’রে উঠতে পারতো না
আমাদের মাকে বাবার সামনে এমন তুচ্ছ দেখাতো যে
মাকে আপনি বলার কথা আমাদের কোনোদিন মনেই হয় নি।
আমাদের মা আমাদের থেকে বড়ো ছিলো, কিন্তু ছিল আমাদের সমান,
আমাদের মা ছিলো আমাদের শ্রেণীর, আমাদের বর্ণের, আমাদের গোত্রের।
বাবা ছিলেন অনেকটা আল্লার মতো, তার জ্যোতি দেখলে আমরা সেজদা দিতাম
বাবা ছিলেন অনেকটা সিংহের মতো, তার গর্জনে আমরা কাঁপতে থাকতাম
বাবা ছিলেন অনেকটা আড়িয়ল বিলের প্রচণ্ড চিলের মতো, তার ছায়া দেখলেই
মুরগির বাচ্চার মতো আমরা মায়ের ডানার নিচে লুকিয়ে পড়তাম।
ছায়া স’রে গেলে আবার বের হয়ে আকাশ দেখতাম।
আমাদের মা ছিলো অশ্রুবিন্দু_দিনরাত টলমল করতো
আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি;_সারাদিন ঝ’রে ঝ’রে পড়তো
আমাদের মা ছিলো ধানখেত-সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো
আমাদের মা ছিলো দুধভাত-তিন বেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো
আমাদের মা ছিলো ছোট্ট পুকুর – আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম।
আমাদের মার কোনো ব্যক্তিগত জীবন ছিলো কি না আমরা জানি না
আমাদের মাকে আমি কখনো বাবার বাহুতে দেখি নি
আমি জানি না মাকে জড়িয়ে ধ’রে বাবা কখনো চুমু খেয়েছেন কি না
চুমো খেলে মার ঠোঁট রকম শুকনো থাকতো না।
আমরা ছোটো ছিলাম, কিন্তু বছর বছর আমরা বড়ো হ’তে থাকি
আমাদের মা বড়ো ছিলো, কিন্তু বছর বছর মা ছোটো হ’তে থাকে।
ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময়ও আমি ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতাম।
সপ্তম শ্রেণীতে ওঠার পর ভয় পেয়ে মা একদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে।
আমাদের মা দিন দিন ছোটো হ’তে থাকে
আমাদের মা দিন দিন ভয় পেতে থাকে।
আমাদের মা আর বনফুলের পাপড়ি নয়, সারাদিন ঝ’রে ঝ’রে পড়ে না
আমাদের মা আর ধানখেত নয়, সোনা হয়ে বিছিয়ে থাকে না
আমাদের মা আর দুধভাত নয়, আমরা আর দুধভাত পছন্দ করি না
আমাদের মা আর ছোট্ট পুকুর নয়, পুকুরে সাঁতার কাটতে আমরা কবে ভুলে গেছি
কিন্তু আমাদের মা আজো অশ্রুবিন্দু, গ্রাম থেকে নগর পর্যন্ত
আমাদের মা আজো টলমর করে।
মাতৃবৎসল
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মেঘের মধ্যে মা গো, যারা থাকে
তারা আমায় ডাকে, আমায় ডাকে।
বলে, ‘আমরা কেবল করি খেলা,
সকাল থেকে দুপুর সন্ধেবেলা।
সোনার খেলা খেলি আমরা ভোরে,
রুপোর খেলা খেলি চাঁদকে ধরে।’
আমি বলি, ‘যাব কেমন করে।’
তারা বলে, ‘এসো মাঠের শেষে।
সেইখানেতে দাঁড়াবে হাত তুলে,
আমরা তোমায় নেব মেঘের দেশে।’
আমি বলি, ‘মা যে আমার ঘরে
বসে আছে চেয়ে আমার তরে,
তারে ছেড়ে থাকব কেমন করে।’
শুনে তারা হেসে যায় মা, ভেসে।
তার চেয়ে মা আমি হব মেঘ;
তুমি যেন হবে আমার চাঁদ—
দু হাত দিয়ে ফেলব তোমায় ঢেকে,
আকাশ হবে এই আমাদের ছাদ।
লুকোচুরি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর