মে দিবসের ছড়া ও কবিতা

১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। শ্রমজীবী মানুষেরা প্রতিনিয়তই নির্যাতিত ও বঞ্চিত। বছরে এই একটি দিন যেদিন আমরা শ্রমজীবী মানুষদের কথা ভেবে থাকি। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস নিয়ে কিছু ছড়া ও কবিতা শেয়ার করেছি। আপনারা যারা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস নিয়ে ছোট্ট সোনামণিদের জন্য ছড়া বা কবিতা অনুসন্ধান করে যাচ্ছেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। চলুন কবিতার মাধ্যমে আমরা আমাদের মনের কথাগুলো বলি এবং শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াই।
শ্রমিকদের অধিকার হোক আদায়
এনাম আনন্দ
শ্রমিক মুক্তির বার্তা নিয়ে মে দিবস সমাগত
ন্যায্য মায়না পেলে শ্রমিক জানাতাম স্বাগত
আজও কেনো বাংলার মজুর মজুরি বঞ্চিত
মালিক পক্ষ শ্রমিক ঘামে কমবেশি সঞ্চিত!
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে হয়ে ছিলো লড়াই
কর্মঘন্টা আট হয়েছে অনেক চড়াই উতরাই
জীবন দিয়ে আদায় করলো শ্রমিক অধিকার
এখনো কি শ্রমিক-মজুর পাচ্ছে স্বাধীকার?
শ্রম আইনের তোয়াক্কা নেই ইচ্ছামত খাটায়
পান থেকে চুন খসে পড়লে কপালখানি ফাঁটায়
কর্মসংস্থান কম থাকাতে নিচ্ছে তারা সুযোগ
চোখ রাঙিয়ে সার্কুলার দেয় কর্মী করে বিয়োগ।
আর কতকাল চলে এমন জানাটা খুব দরকার
শ্রমজীবীর শ্রম আদায়ে নজর রাখবে সরকার
মিল মালিকদের উপলব্ধি শ্রমিক মুখে হাসি
উদ্দাম নিয়ে বুনবে ফসল গেরাম বাংলার চাষি।
শিল্পের বিকাশ ঘটবে দেশে রইবে না কেউ দুখে
দিনের শেষে মায়না পেয়ে থাকবে সবাই সুখে
আধিকার আদায়ের ব্রত নিয়ে মে দিবস আসে
ন্যায্য অধিকার দিয়ে শ্রমের থাকব আমরা পাশে।
শ্রমিক
বিচিত্র কুমার
শ্রমিক বলে কেউ আমাদের
দেয়না কোন মূল্য,
সবাই ভাবে মনে মনে
আমরা পশুর তুল্য।
দিনরাত খেটে মরি
অন্যের স্বপ্ন নির্মাণে,
হাসিমুখে স্বর্গের সুখটা
জগতে দিতে এনে।
রৌদ্রে পুড়ি বৃষ্টিতে ভিজি
রক্তঝড়া ঘাম,
কিন্তু মালিক দিতে চায়না
শ্রমিকের সঠিক দাম।
আমরা যদি কাজনা করি
কেমনে তোমরা চলবে,
স্বপ্নের পৃথিবী সুখের স্বর্গ
অট্টালিকা গরবে।
মে দিবস
গোলাপ মাহমুদ সৌরভ
মে দিবস সফল হোক
সকল শ্রমিকের বাণী,
সঠিক কাজের মূল্য চাই
দূর হোক যত গ্লাণি।
কলের চাকা আমরা ঘুরাই
আমরাই শ্রমিক জানি,
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে
পাইনা ন্যায্য মানি।
আমরা শ্রমিক দিনমজুর
চাই যে শ্রমের মূল্য,
অল্প টাকা বেতন মোদের
হয়না পরিশ্রমের তুল্য।
শ্রমের মূল্য যে দিতে হবে
মালিক পক্ষ যারা,
অতিরিক্ত শ্রমের হিসাব দাও
ওভারটাইমের ধারা।
কথায় কথায় ধমক দিয়ে
গায়ে তুলে যে হাত,
গালিগালাজ চোখ রাঙিয়ে
খাটায় যে দিন রাত।
শ্রমিকের হাহাকার
মাইন সরকার
কারা যেনো ফাঁত পেতে কলকাঠি নাড়ছে
শ্রমিকের হাহাকার প্রতিদিন বাড়ছে
সৎ পথে চলে যারা গায়ে খেটে চলছে
অসহায় অনটনে তারা সব টলছে।
চাল-ডাল তেল-চিনি – দাম শুধু বাড়ছে
ভালো কিছু কিনে খেতে আর নাহি পাড়ছে
শ্রমজীবী মানুষেরা বার বার হারছে
মানবতা নামে শুধু – ছবি তুলা বাড়ছে।
শ্রম দিবস স্মরণে
বাসুদেব সরকার
আমেরিকার শিকাগো ওই
বিক্ষোভ শহর জুড়ে,
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে
যায় শ্রমিকরা লড়ে।
বিক্ষোভ, দাবি কর্মদিবস
আট ঘন্টারই লক্ষ্যে,
আন্দোলনকে দমন করতে
গুলি শ্রমিক বক্ষে।
শ্রমিকদের এই আত্মত্যাগ
শ্রদ্ধা প্রেমে স্মরণ,
কর্মদিবস আট ঘন্টা আজ
সার্থক তাঁদের মরণ।
প্রতি বছর পহেলা মে
এই পৃথিবীময়,
আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস
পালন করা হয়।
মে দিবস
মাথুর দাস
মে দিবস যে দিবস মুক্তির,
দিবস দাবি-দাওয়ার ;
লড়াই করে জীবনপণ
মর্যাদাটি পাওয়ার ।
রক্ত ঝরার শক্ত সে দিন
ঐক্য এবং মুষ্ঠিবদ্ধ হাত,
জীবন দিয়েও শ্রমিক সফল,
আনতে আশার নতুন সুপ্রভাত।
শ্রম-সময় আর মজুরি-বেতন
এবং কিছু সুবিধা অধিকার,
মহান মে দিবসের সে অবদান
ভুলতে পারে কে কবে বা আর!
বিশ্বজুড়ে কর্মরত শ্রমিক যত
আজও মানে বিপ্লবেরই দাম,
মনে রেখে সব শহীদস্মৃতি-ক্ষত
স্মরণ করে যে মে দিবস মহান।
ইবলিশের খেয়াল
ইসলাম মুহাম্মদ তৌহিদ
নিমিষেই এত মানুষ পুড়ে অঙ্গার!
কার স্বার্থে মানুষ মারো, হিংস্র জানোয়ার?
হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ‘রাঘববোয়াল’
ধরাছোঁয়ার বাহিরে আর কত কাল?
তাজরীন থেকে রানা প্লাজা,
রূপগঞ্জ থেকে সীতাকুণ্ড
আর কত দীর্ঘ হবে এই হত্যাকাণ্ড?
যে মানুষের মেধাশ্রমে,
যে মানুষের রক্তঘামে
গড়া সভ্যতার দেয়াল,
সেই মানুষকেই নির্বিচারে
পুড়িয়ে মারে ইবলিশের খেয়াল!
শ্রমিক
সামিউল ইসলাম
যে শ্রমিকে সচল রাখে
অর্থনীতির চাকা
সে শ্রমিক কে অবহেলা
যায় না করে থাকা।
যে শ্রমিকের নানান কাজে
স্নেহের পরশ মাখা
সে শ্রমিক কে ভালোবেসে
হয় না কেন ডাকা?
যে শ্রমিকে হাসি ফোঁটায়
কারুকাজে আঁকা
উচিত, তাঁকে শ্রদ্ধা ভরে
হৃদয়মাঝে রাখা।
মজুরনামা
মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ হক
মজুর আমি শ্রমজীবী ভাই
ঘামের দামে পয়সা কামাই।
রক্ত বেঁচে খোরাক কিনি
সেবক-ঠগী সবকে চিনি।
শ্রমিক খাটায় গরুর মতো
পাওনা দিতেই নখড়া যতো;
সূচের দায়ে কাটছে বেতন
বললে কথা বাড়ছে যাতন!
পরের শ্রমের মূল্য কেড়ে,
শান্তি খোঁজে, পায়রা ছেড়ে।
এমন মালিক দেখবে যদি
পথে নামো— ছেড়ে গদি!
ধনীর দুলাল ধন বিকিয়ে
বিলায় সেবা লোক দেখিয়ে
দিন ফুরোলে দেখবে শেষে
ডিস্কো মাতায় হেসে হেসে।
বিভীষণে খাচ্ছে লুটে—
মরছে ধুঁকে মজুর-মুটে!
এই তো তোমার সোনার ঘাঁটি
এই তো আমার বাংলার মাটি!
মে দিবস
অবিনাশ আচার্য
মে দিবস মে দিবস— আসে আর যায়
শ্রম দিয়ে ঠিক দাম কতজন পায়?
কতজন জানে বলো ঠিক ইতিহাস
দেশে দেশে কে বানায় পুঁজিবাদী দাস?
সভ্যতা গড়ে আর ঝরে কার ঘাম
সোনার হরফে কার লেখা থাকে নাম?
মে দিবস মে দিবস— সভা-সেমিনার
একদিন আলোচনা, ছুটিটাই সার!
মেহনতি মানুষের গেয়ে জয়গান
বাড়ছে কি শ্রমিকের জীবনের মান?
মে দিবস মে দিবস —দাবি একটাই
শ্রমনীতি মেনে কাজ পাওনাও চাই।
শ্রমজীবী শিশুরা
মারজানা সাবিহা শুচি
শোনো গো ছোট্টো খুকু, স্কুল থেকে ফিরছো,
রাস্তায় ঐ পাশে দাঁড়িয়ে কে, দেখছো?
মেয়েটার হাতে নেই বই, ব্যাগ, ছাতা;
পরনের জামাটাও ধুলো মেখে যা তা!
ওর হাতে দেখছ কী? হ্যাঁ গো ওটা হাতুড়ি,
ইটগুলো ভেঙে তবে পাবে কিছু মজুরি।
যে গ্যারেজে তোমাদের গাড়ি নেয় সারাতে,
দেখেছ কি ছেলেটাকে রেঞ্জ হাতে দাঁড়াতে?
ঐ দেখো রাস্তাতে টেম্পুটা চলছে
পেছনে পিচ্চি এক হেল্পার ঝুলছে।
বড়ো বড়ো কারখানা আছে এই শহরে
কত যে শ্রমিক খাটে, ছোট তারা বহরে।
এমন যে কত পাবে হাটে-মাঠে-ঘাটে
করে তারা রোজগার কচি হাতে খেটে।
স্কুল নেই, পড়া নেই, ভাবো থাকে আরামে?
হাড় ভাঙ্গা যে খাটুনি শীত কিবা গরমে!
খেলা নেই, খুশি নেই, ভাত নেই পেটে,
“শিশু অধিকার” বুঝি মরে কেঁদে কেটে।
মে দিবসে আজ এসো শুধু মোরা চাই এই-
শিশুশ্রম উঠে যাক, স্কুলে যাক সকলেই।
নিরব সেবক
স.র. সাঈদ
দেশ-জনতার নিরব সেবক
বলতে পারো কারা?
এর উত্তরে বলবো আমি
শ্রমিক আছে যারা।
তাদের শ্রমে তাদের ঘামে
গড়ে ওঠে শহর
সেই শহরে শ্রমিকেরা
দিচ্ছে রাতে প্রহর।
নিত্য তারা ঘাম ঝরিয়ে
সবার সেবা করছে
আড়াল থেকে শ্রম বিলিয়ে
দেশের হয়ে লড়ছে।
রাজা-প্রজা সবার কাজে
শ্রমিকদেরকে লাগে
দিনযাপনে শ্রমিকদেরকে
প্রয়োজন হয় আগে।
দে দে দে শ্রমের মূল্য দে
মজনু মিয়া
দে দে দে শ্রমের মূল্য দে
শ্রমিক সে জন গায়ের ঘামে
গড়ে তুলে শ্রমের দামে
শিল্প কারখানা বুঝে নে।
মালিক শ্রমিক নয় কো ভিন্ন
নাই কো তাতে জাতের চিহ্ন
না হই যেন বাঁধন ছিন্ন
নে তোর ঐ বুকে বেঁধে নে।
খুঁজলে শ্রমে ভেদাভেদ তাই
উন্নয়ন হবে যে বালাই
বলবে শ্রমিক নিজকে বাঁচাই
এমন কাজ তালা মেরে দে।
শিকল ভাঙার গান
ভাঙ্গো এবার শিকল ভাঙ্গো
নিয়ম বাঁধার নিয়ম যত
অনিয়মে গুড়িয়ে ফেলো,
রুদ্ধ দুয়ার ভেঙ্গে দিয়ে
ভেতর থেকে বেরিয়ে পড়ো।
মেঘের দিল যেমন করে
বজ্র ডাকে দুর্বিপাকে,
তেমন করে কণ্ঠ ছিঁড়ে
শব্দ ছুড়ো বধির কানে।
কালো ছায়া আকাশ জুড়ে
রাত নেমেছে ঈশান কোণে
ঘন আঁধার আসছে ধেঁয়ে,
মশাল যত মশাল জ্বালো
আগুণ হাতে ছড়িয়ে পড়ো।
উবার বুকে ঊষা ধরো
মুষ্টি জুড়ে হাতল বাধো,
তক্ত-তাউস লাথি মারো
পাথর বুঁকে আঘাত হানো।
আর কতকাল থাকবে পড়ে
সিন্ধুঘোটক হীম প্রবাহে?
পৌরুষলি দীপ্তি ছাড়াও
শিবের মত রুদ্র হও,
প্রলয় নাচন নৃত্য ঝড়াও
রাষ্ট্র জুড়ে দামামা বাজাও।
ক্রুরের হাসি স্বৈর ঠোঁটে
রক্ত স্বাদ দাঁতল জুড়ে,
শুকুন গুলো ঝাঁপিয়ে নামে
মানব জবীন লীন করেছে।
শাসন ডরে শোষণ করে
শিকল বাঁধে পাঁজর জুড়ে।
অস্ত্রধারী সৈন্য পুষে
ঘাতক গুলো শাসক সাজে,
জোকের মত জেঁকে বসে
ক্ষুদিতের রক্ত চোষে।
গাড়ল গুলো গারদ গড়ে
মুক্ত হাত বদ্ধ করে,
ভীম করার ঐ ভয় দেখিয়ে
মিছিলটাকে রুদ্ধ করে।
ভাঙ্গো তবে দুয়ার ভাঙো
প্রাচিলটাকে ভৎস করে
স্বপ্ন চোখে অবাধ বাধো।
যাঠা হাতে তেড়িয়ে এসো
শৈল্য নিয়ে ঝাঁপিয়ে নামো
পঞ্চস্বরে তুফান ডাকো
যাঁহ হয়ে আঁচড়ে পড়ো
তক্ষক গুলো পিটিয়ে মারো।
ভাঙ্গো তবে শিকল ভাঙ্গো
শিখর ছেড়ে শিকড় ধরো
হেঁচকা টানে উপড়ে ফেলো,
গাজনের বাজনা বাজুক
মুহূরুহের পতন হোক।