বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উক্তি ও নবীন লেখকের জন্য উপদেশ সমূহ

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের এক অগ্রণী পথিকৃত ও জাতীয়তাবাদী চিন্তা চেতনার প্রণেতা। তার লেখা “দুর্গেশনন্দিনী” উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের নতুন যুগের সূচনা করে। বাংলা সাহিত্যের তার অবদান অপরিসীম। আপনারা যারা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা অনেক পছন্দ করেন এবং অনলাইনে অনুসন্ধান করে চলেছেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উক্তি ও উপদেশ সমূহ । তারা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি থেকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উক্তি ও নবীন লেখকের জন্য উপদেশ সমূহ সংগ্রহ করুন।আমাদের আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা তুলে ধরেছি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কিছু উক্তি ও নবীন লেখকের জন্য উপদেশ সমূহ।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উক্তি

  • কতকগুলি লোক আছে, এদেশের লোক তাহাদের বর্ণনার সময় বলে, “ইহারা কুকুর মারে, কিন্তু হাঁড়ি ফেলে না৷”

  • যে ক্ষুধার্ত নয়, তাকেই বেশি করে খাওয়াতে চায়।
  • সংসার-সমুদ্রে স্ত্রীলোক তরণী স্বরুপ- সকলেরই এই আশ্রয় গ্রহন করা কর্তব্য।
  • আত্মোপকারীকে বনবাসে বিসর্জন করা তাহাদিগের প্রকৃতি, তাহারা চিরকাল আত্মোপকারীকে বনবাস দিবে–কিন্তু যত বার বনবাসিত করুক না কেন, পরের কাষ্ঠাহরণ করা যাহার স্বভাব, সে পুনর্বার পরের কাষ্ঠাহরণে যাইবে। তুমি অধম–তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?
  • যে কখনো রোদন করে নাই, সে মনুষ্য মধ্যে অধম। তাহাকে কখনও বিশ্বাস করিও না। নিশ্চিত জানিও সে পৃথিবীর সুখ কখনো ভোগ করে নাই। এর সুখও তাহার সহ্য হয় না।
  • পাহাড় যত নিকট দেখায়, তত নিকট নয়।

  • ওপারে যে যন্ত্রণার কথা শুনিতে পাও, সে আমরা এই পার হইতে সঙ্গে করিয়া লইয়া যাই। আমাদের এ জন্মের সঞ্চিত পাপগুলি আমরা গাঁটরি বাঁধিয়া, বৈতরিণীর সেই ক্ষেয়ারীর ক্ষেয়ায় বোঝাই দিয়া, বিনা কড়িতে পার করিয়া লইয়া যাই। পরে যমালয়ে গিয়া গাঁটরি খুলিয়া ধীরে সুস্থে সেই ঐশ্বর্য্য একা একা ভোগ করি।
  • স্ত্রীলোকদিগের উপর যেমন কঠিন শাসন, পুরুষের উপর তেমন কিছু নেই। কথায় কিছু হয় না, ভ্রষ্ট পুরুষের কোন সামাজিক দণ্ড নেই। একজন স্ত্রী সতীত্ব সম্বন্ধে কোন দোষ করিলে সে আর মুখ দেখাইতে পারে না। হয়তো আত্মীয় স্বজন তাকে বিষ প্রদান করেন, আর একজন পুরুষ প্রকাশ্যে সেই সব কাজ করিয়া রোশনাই করিয়া জুড়ি হাকাইয়া রাত্রিশেষে পত্নীকে চরণরেণু স্পর্শ করাইয়া আসেন, পত্নী পুলকিত হয়েন।
  • যাকে ভালবাস তাকে চোখের আড়াল করোনা।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উক্তি

  • কুসুম আপনার জন্য ফোটে না, পরের জন্য তোমার হৃদয় কুসুমটিকে প্রস্ফুটিত করিও
  • যাহার ঘরে চাকরানী নাই তাহার ঘরে ঠকামি, মিথ্যা সংবাদ, কোন্দল এবং ময়লা, এই চারটি বস্তু নাই।
  • সুখ যায় স্নৃতি যায় না, ক্ষত ভাল হয় দাগ ভাল হয় না, মানুষ যায় নাম থাকে।
  • রূপে মুগ্ধ, কে কার নয়। আমি এই হরিতনীল চিএিত প্রজাপতিটির রূপে মুগ্ধ। তুমি কুসুমতি কামীনি শাখার রূপে মুগ্ধ। তাতে দোষ কি? রূপত মোহের জন্য হইয়া ছিল।
  • বাঘ গরু মারে সকল গরু খায় না। স্ত্রীলোক পুরুষ কে জয় করে কেবল জয় পতাকা উড়াইবার জন্য।
  • এ সংসারে বিশেষ দুঃখ এই যে মরিবার সময়ে কেহ মরে না। অসময়ে সবাই মরে।
  • আমার এমন গুন নাই যাহাতে আমায় তুমি ক্ষমা করিতে পার কিন্তু তোমার ত অনেক গুন আছে , তুমি নিজ গুনে আমায় ক্ষমা কর।
  • যাহাকে ভালবাস তাহাকে নয়নের আড় করি ও না।
  • এ পৃথিবীর সুখ নহে সুখ ও দুঃখময়, কোন সুখেই সুখ নাই কোন সুখই সম্পূর্ণ নহে।
  • তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেনো?

নবীন লেখকের জন্য বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপদেশ সমূহ

<>যশের জন্য লিখিবেন না। তাহা হইলে যশও হইবে না, লেখাও ভালো হইবে না। লেখা ভালো হইলে যশ আপনি আসিবে।

<>টাকার জন্য লিখিবেন না। ইউরোপে এখন অনেক লোক টাকার জন্যই লেখে, এবং টাকাও পায়, লেখাও ভালো হয়। কিন্তু আমাদের এখনো সেদিন হয় নাই। এখন অর্থের উদ্দেশ্যে লিখিতে গেলে লোক রঞ্জন প্রভৃতি প্রবল হইয়া পড়ে। এখন আমাদিগের দেশের সাধারণ পাঠকের রুচি ও শিক্ষা বিবেচনা করিয়া লোক রঞ্জন করিতে গেলে রচনা বিকৃত ও অনিষ্টকর হইয়া ওঠে।

<>যদি মনে এমন বুঝিতে পারেন যে লিখিয়া দেশের বা মানুষ জাতির কিছু মঙ্গল সাধন করিতে পারেন অথবা সৌন্দর্য সৃষ্টি করিতে পারেন, তবে অবশ্য লিখিবেন। যাহারা অন্য উদ্দেশ্যে লেখেন, তাহাদিগকে যাত্রা ওয়ালা প্রভৃতি নিচ ব্যবসায়ী দিকের সঙ্গে গণ্য করা যাইতে পারে।

<>যাহা অসত্য, ধর্মবিরুদ্ধ, পরনিন্দা বা পরপিরন বা স্বার্থসাধন যাহার উদ্দেশ্য, সে সকল প্রবন্ধ কখনো হিতকর হইতে পারে না। সুতরাং তাহা একেবারে পরিহার্য। সত্য ও ধর্মই সাহিত্যের উদ্দেশ্য। অন্য উদ্দেশ্যে লেখনই ধারণা মহাপাপ।

<>যাহা লিখিবেন তাহা হঠাৎ ছাপাইবেন না। কিছুকাল ফেলিয়া রাখিবেন। কিছুকাল পরে উহা সংশোধন করিবেন। তাহা হইলে দেখিবেন প্রবন্ধে অনেক দোষ আছে। কাব্য-নাটক-উপন্যাস দুই-এক বৎসর ফেলিয়া রাখিয়া তারপর সংশোধন করিলে বিশেষ উৎকর্ষ লাভ করে। যাহারা সাময়িক সাহিত্যের কার্য প্রতি, তাহাদের পক্ষে এই নিয়মটি ঘটিয়া উঠে না। এজন্য সাময়িক সাহিত্য লেখকের পক্ষে অবনতি কর।

<>যে বিষয়ে যাহার অধিকার নাই, সে বিষয়ে তাহার হস্তক্ষেপ অকর্তব্য। এটি সোজা কথা কিন্তু সাময়িক সাহিত্যে এই নিয়মটি রক্ষিত হয় না।

<>বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা করিবেন না। বিদ্যা থাকিলে তাহা আপনি প্রকাশ পায়, চেষ্টা করিতে হয় না। বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা পাঠকের অতিশয় বিরক্তিকর এবং রচনার ফাঁকে পানিপাট্যের বিশেষ হানি জনক। এখনকার প্রবন্ধে ইংরাজি, সংস্কৃত, ফরাসি, জার্মান, কোটেশন বড় বেশি দেখিতে পাই। যে ভাষা আপনি জানেন না, পরের গ্রন্থের সাহায্যে সে ভাষা হইতে কদাচ উদ্ধৃত করিবেন না।

<>অলংকার প্রয়োগ বা রসিকতার জন্য চেষ্টিত হইবেন না। স্থানে স্থানে অলংকার বা ব্যঙ্গের প্রয়োজন হয় বটে, লেখক এর ভান্ডারে সামগ্রী থাকলে, প্রয়োজন মতে আপনি আসিয়া পৌঁছিবে-ভান্ডারে না থাকিলে মাথা কুটিলেও আসিবে না। অসময়ে বা শূন্য ভান্ডারে অলংকার প্রয়োগের বা রসিকতার চেষ্টার মত কদর্য আর কিছুই নাই।

<>যে কথার প্রমাণ দিতে পারিবেন না, তাহা লিখিবেন না। প্রমাণগুলি প্রযুক্ত করা সকল সময় প্রয়োজন হয় না, কিন্তু হাতে থাকা চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *